বৃহস্পতিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১০

মা দিবস পিতৃবিয়োগ এবং একটি সফেদ শাড়ি


by Robi Karim on Wednesday, May 12, 2010 at 9:22pm



ইয়াহুতে মা দিবসের একটি বিজ্ঞাপন দৃষ্টি এড়ায়নি,মা'র প্রসঙ্গ বলেই বিস্তারিত দেখে নিলাম এক নজর। আমার সহকর্মী এস এ বাবলু তখন থেকেই মা দিবসের একটা এসএমএস'র জন্য জ্বালাতন শুরু করেছে, আমিও মনে মনে মা দিবসে সকলকে দেয়ার জন্য ক্ষুদ্রবার্তা লেখার চেষ্ঠা চালাচ্ছিলাম;হয়ে উঠেনি। যথাসময়ে তাকে এসএমএসটি দিতে পারিনি।
প্রিয় সাইদ ভাইয়ের দেয়া স্ট্যাটাসটি যার বাংলা তর্জমা করলে কমবেশী এ রকম "ওর্য়েস্টান মা দিবসের ধারনা এসেছে তাদের থেকে যারা তাদের মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়,নিজেদের অপরাধকে গৌন করার জন্য দিবসটি তারা পালন করে,কিন্তু আমাদের বাঙালী সংস্কৃতিতে মা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে অবিভাজ্য অংশ" যা মা দিবসের অনবদ্য এক এসএমএস।
মা দিবসের নানা আয়োজনের জন্য যখন নিজেকে প্রফুল্ল করছিলাম এমনই একদিন সকালরাতে কাবেরী'র মুঠোফোন খবর এনে দিল আমার জনকের মৃত্যুসংবাদ। অধিক শোকে পাথর কথাটি শুনেছিলাম,তার মর্ম উপলব্দি করেছিলাম সেদিন।আমার পিতা ও আমার মধ্যে আপাত দৃষ্টিতে কোন অমিল ছিলনা। শুধুমাত্র ধর্ম সংক্রান্ত বিপত্তি ছাড়া, বাবার মত ক্লীব একজন অথর্ব ইশ্বরে আমার কোন বিশ্বাস ছিলনা।তাই ধর্মীয় বিশ্বাসে অমিলই তার সাথে আমার অমিল।তার শেষকৃত্যতে লোকসমাগমই আমাদের গ্রামে তার জনপ্রিয়তার প্রমান।
আমার কাছেও সে প্রিয়তর ছিল,মাঝে মাঝে তার সাথে বাক্যবিনিময় হয়ে যেত আমার নামাজে অংশ গ্রহন না করাকে কেন্দ্র করে। তবুও সে আমাকে ও কাবেরীকে খুব সমীহ করতেন। প্রতিদিন অন্তত একবার ফোন করে খোঁজ নিতেন। আজ তিনি নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে অবিনশ্বর জগতের অধিবাসি। তাঁর স্মৃতিগুলো এখনো সবুজ সতেজ।
আমার মাকে আমি সবসময় রঙ্গীন শাড়িতে দেখে আসছি বাল্যকাল থেকে সাদাশাড়ি পড়তে দেখিনি বল্রলেই চলে।বাবার মৃত্যুর পর প্রথম যখন মায়ের সাথে দেখা হয় তখন তাকে শাদাশাড়িতে দেখে আমি স্থির থাকতে পারিনি।দু'দিন মা'র কাছে যেতাম যখন তিনি ঘুমিয়ে থাকতেন তখন।পরদিন রাতে বড়আপা কে বললাম, আপা মাকে কাল থেকে অন্যশাড়ি পরতে দিবেন।
আপা জানালেন ধর্মীয় বিধিতে ইদ্দত পালনকালে শাদাশাড়ি পড়া নিয়ম।আমি রেগে গিয়ে এ নিয়মের প্রতিবাদ জানাই।কারন শাদাশাড়ি পরিহিত মায়ের কাছে আমি যেতে পারছিনা বলে তাকে জানালাম।আদৌ এ নিয়ম আছে কিনা আমার জানা নেই।এমন কোন কোরানের বানী আমি কখনো পাইনি,এমন কোন হাদিস ও পড়িনি তাহলে কেন মায়ের উপর শাদাশাড়ি ছাপিয়ে দেয়া;মা'র খুব কষ্ট হচ্ছে তুই তাকে অন্য শাড়ি পরা আপা।ধর্মে এমন কিছু আছে কেউ প্রমান আছে বলে মনে হয়না। তোরা ধর্ম মানতে গিয়ে কুসংস্কার মানিস না। শাদাশাড়ি পরা কি আসলেই ধর্মীয় নাকি কুসংস্কার?


আপা মাকে বিষয়টা জানালে মা আমাকে ডেকে বলেন,পাগলামি করিস না মানুষ খারাপ বলবে ৪০দিন আমি শাদাশাড়ি ছাড়াস কিছুই পরবো না।আমার উপর কেউ ছাপিয়ে দেয়নি আমি নিজেই পরেছি।
মা বিষয়টি সহজে মেনে নিলেও আমি পারিনি।

মা দিবস এলো;চলেও গেল মায়ের জন্য আমার লালনীল অনুভূতিগুলো ডেকে দিয়ে গেল একটি সফেদশাড়ি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন